top of page

অহনা

25/11/2016

          

 মিনহাজ সাহেব ছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, বিয়ের দশ বৎসর পর এক কন্যা সন্তানের জনক হন। দির্ঘদিন কোন ছেলেমেয়ে না থাকাতে,মনে খুব কষ্ট ছিল এবার উনি উনার স্ত্রী দুজনে ভীষন খুশি। আদরের দুলালি কন্যা সারাক্ষন বাবা মার চোখের মনি হয়ে থাকেন। আদর সোহাগ নানা বায়না লেগেই থাকে। নামটিতেও খুব আদুরি আদুরি ভাব (অহনা)।  একদিন বাবা একটি রাজহাঁস কিনে আনলেন, হাঁসটি অহনার খুব পছন্দ। সারা বাড়ি মাথায় নিয়ে ঘুরছে,হাঁস নিয়ে খেলা পুকুর পাড়ে দৌড়ানো।কয়দিন পর হঠাৎ বাড়িতে মেহমানের আগমন, আহনা স্কুলে। মা হাসটি জবাই করে ফেললেন রান্না বান্না হলো। মেহমানদারি চলছে। অহনা স্কুল থেকে ফেরে শুনতে পায় হাঁস জবাই হয়ে গেছে সে কেঁদে অস্তির। আমার হাঁস এনে দাও। তার কথা হলো হাঁসটি কেনো খুন করা হলো। কেনো জীব বধ করা  হবে, এই প্রশ্ন তার। অহনা মেয়েটা ছিলো খুব ভীতু , সে মারামারী কাটাকাটি সে খুব ভয় পেতে। তার মন থেকে সেই হাঁস জবাইর ঘটনাটি কোন অবস্তাতেই সরতে ছিলো না সে রিতিমত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে সারাক্ষন এই নিয়ে ভাবতে থাকে। দেখতে দেখতে এক যোগ কেটে যায়। বিয়ের প্রস্তাব আছে ছেলে ফরেস্ট অফিসার। যথারীতি বিয়ের অনুষ্টান সমাপ্ত হয় অহনা চলে যায় স্বামীর সাথে বাগানের বাংলোতে। একদিন বন্ধুবান্ধব সহ সবাই শিকারে বের হয় ফরেস্ট এরিয়াতে সবাই গল্প গুজবে মশগুল এর মধ্য হটাৎ গুলির শব্দ,অহনা চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটে পডে, তার সামনে একটি হরিনী  বধ করে তার স্বামী রায়হান চৌধুরী ঘন্টা খানিক পর জ্ঞান ফেরে অহনার। সে অঝোরে কাঁদতে থাকে। ভীষন মায়া হয় তার হরিনীর জন্য। কোন মৃত্যুকে অহনা সহজে মেনে নিতে পারে না। এই তার দুর্বলতা কয়দিন পর আবার শিকারে বের হয় ওরা স্বামী স্ত্রী, এবার রায়হানের একটাই কথা অহনা বন্দুক চালাবে উপায় না দেখে অহনা এবার সত্যি সত্যি বন্দুক চালাতে শুরু করে ধাপ করে হরিনী মাটিতে লুটিয়ে পডে। অহনা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,নিজেকে ভীষন অপরাধী ভাবে। তার মনে হরিনীটী বলছে আমাকে কেনো খুন করলে। এবার অহনার কোল আলো করে এলো অপরুপা কন্যা সন্তান নাম পুস্প। সুন্দর ফুটফুটে চটপটে মেয়ে। বাবা মার খুব আদরে বড় হতে লাগলো। স্কুল শেষ করে কলেজ তারপর বিশ্ববিদ্যালয় ফাইনেল ইয়ারে। অহনার এক খালাতো বোন ইটালি প্রবাসী, স্বপরিবারে ইটালি থাকেন, খুব সুন্দর শিক্ষিত ছেলে উনার, ছেলেকে বিয়ে দিবেন দেশে এসেছেন। উনি আবার অহনার খুব ভালো বন্ধুও, পুস্পকে উনার খুবই পছন্দ। তাই কথাবার্তা পাকা করে বিয়ের দিন ধার্য করা হলো।  বিয়ের ছেলে চলে যাবে ইটালি, পুস্প থাকবে বাবা মার কাছে। ধুমধাম করে বিয়ে হলো। এবার  পুস্পের বর রুমেল চলে গেল ইটালি। পুস্প আগের মতো ভারসিটিতে যাওয়া আশা শুরু  করলো। দিন যায় দেখতে দেখতে ছয় মাস  চলে গেলো। হঠাৎ একদিন পুস্পের শরীর খুব খারাপ হলো মা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। চেকআপ শেষ হলো, ডাক্তারের মুখে হাসির রেখা আপনার মেয়ে মা হতে চলেছে। অহনার মাথায় বজ্রাঘাত, কোন রকম বাসায় এসে পৌছান।  এ কি অভিশাপ অহনার জীবনে। কি জবাব দেবেন তিনি রুমেল আর রুমেলের মাকে। চিন্তায় তার ঘুম নিদ্রা হারাম। স্বামীকে জানানোর প্রশ্নই আসে না। পাড়াপডশী কেউ যেন জানতে না পারে, ছেলে ইটালি গিয়েছে আজ ছয় মাস। পুস্প মা হতে চলেছে, মাত্র চার সাপ্তার সন্তান গর্ভে, এ কেমন অসন্মান জনক ব্যপার, অহনার মাথা ঘুরছে। মেয়েকে বকা ঝকা করে কোন লাভ নেই যা হবার তাতো হয়েছে, অহনার মনে বিষাদের ছায়া। নিদ্রাবিহীন রজনী কাটছে অহনার,হঠাৎ তার কানে এলো হরিনী বধের সেই গুলির আওয়াজ,চট করে লাইট অন করতেই দেখেন  উনি মেয়ের রুমে দাডিয়ে। সামনে পড়ে আছে রক্তাক্ত হরিনী নয় আদরের দুলালী পুস্প। সেই রাজহাঁস থেকে হরিনী তার পর নিজের মেয়েকে। তার জীবনের তিনটি অধ্যায় তিন চরিত্র ফুটে উটে। সেই ভিতু মেয়েটি জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে এতো বড় একটি সাহসী এবং হিংস্র কাজ করতে পারে। এটা অকল্পনীয়, তবুও মানব চরিত্রের বৈশিষ্ট এটাই।  

লিপস্টিক 

20/11/2016

 

ছোট্ট পাছঁ বৎসরের মেয়ে গুনগুন, সারাক্ষন মায়ের সাথে ঘুরঘুর করতে থাকে। রান্না ঘরে রান্না করবে সে ধরে বায়না, মার সাথে অফিস যাবে, এই সব নিয়ে মেতে থাকে। এক দিন গুনগুন চাচার বাসায় বেড়াতে যাবে মায়ের সাথে এক জন্মদিনের পার্টিতে, মা সাজুগুজ করছে আপন মনে, এদিকে গুনগুন চুপ করে দেখছে, হঠাৎ নিজের হাতে লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে লাগানো শুরু করে। লাল টুকটুকে করে ফেলে ঠোঁট। মা দেখে অনেক বকাঝকা করে। "তোমাকে খুব অসুন্দর লাগছে মা, মূছে ফেলো এই লিপস্টিক।" গুন গুন বলে, "না মামনি মূছবো না।" এবার বেড়াতে গিয়ে কি কান্ড। কারো সাথে কথা বলা না, কিছু খাওয়া,সে  মুখ বন্ধ করে আছে। সবাই জীগেস করছে, "কি গুনগুন খাচ্ছ না কথা বলছো না" তখন হাত দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ঠোঁটে লিপস্টিক। সবাই হেসে খুন, মেয়ের বুদ্ধি দেখে।  

বুলেট  

26/10/2016

 

লাল বেনারসী পরে বঁধু বেশে বসে আছে আমেনা, তার পাশেই আনোয়ার বরের সাঝে। বিয়ে বাড়ির কোলাহল চারিদিকে মেহমানদের হৈ চৈ। কাজী সাহেব এলেন মুরব্বিরা সবাই এলেন, এবার বিয়ে পড়ানোর পর্ব শেষ হলো,ধুমধাম চলছে। হটাৎ চারিদিকে গুলাগুলির প্রচন্ড আওয়াজ, বিদুৎ চলে গেল মুহুর্তের মধ্যেই শুরু হলো কান্না যে যার মতো ছুটে পালাচ্ছে, করুণ আর্তনাদ। জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকে আমেনা, জ্ঞান ফিরার পর জানতে পারে সে, তার ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাবা এসে নানান কথায় বুঝাতে চান আমেনাকে, আমেনার অবুঝ মন কিছুতেই মানে না। দেশের অবস্তা আরও অবনতি হয় মুক্তি যোদ্ধ, চলছে, রাস্তা ঘাট সব অচল যাতায়াত ব্যবস্হা বন্ধ। অনেক কষ্টে আমেনাকে নিয়ে ওর বাবা গ্রামে পৌছান, গ্রামে এসে শুনতে পায় আমেনা আনোয়ার যুদ্ধে গেছে। দিন যায় রাত যায় আমেনা লুকিয়ে চোখের জল ফেলে আর মনে মনে খুঁজে সেই মানুষটিকে,যাকে হারিয়েছিল সেই রাতে। হঠাৎএক  বৃষ্টির রাতে কয়েক জন যোদ্ধা এসে উঠে, ওদের বাড়ি তে, আমেনার বাবা তাদের আশ্রয় দেন। ওদের খাবারের ব্যবস্হা করা হয়। বাহিরের ঘরে ওরা সবাই খেতে বসে, আমেনা জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে থাকে, হটাৎ যেন আমেনার মনে হয় সে স্বপ্ন দেখছে,মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমেনার দিকে, সে যে আর কেউ নয় আমেনার মনের মানুষটি আমেনা দৌড়ে এসে বাবারে জড়িয়ে কান্না শুরু করে, এবং বলে আনোয়ার এসেছে, সেই রাতেই আমেনার বাড়িতেই হয় ওদের বাসর রাত। বীর মুক্তি যোদ্ধা আনোয়ার তখন সহায় সম্বল হীন, নববধুকে বরণ করার মতো কোন উপহার তার তার কাছে নেই। তখন আনোয়ার পিস্তল থেকে কয়টি বুলেট বের করে আমেনার হাতে দিয়ে বলে, আমেনা এই হলো আমার ভালোবাসার উপহার, তুমি সুখি হও আশির্বাদ করি, বীর সন্তানের জননী হও, ফজরের নামাযের আগেই আনোয়ার বিদায় নেয়, আর কখনো ফিরে আসে নাই সে। কয়েক মাস কেটে যায় যুদ্ধ শেষ হয় দেশ স্বাধীন হয়, শহীদ মুক্তি যোদ্ধা আনোয়ারের স্ত্রী আমেনা নিয়ে আসে সুন্দর ফুটফুটে এক বীর সন্তান, আমেনা তার নাম দেয় বুলেট।  

© 2017 by Dhupshikha. All rights reserved

bottom of page